Translate

Monday, September 10, 2012

বিশ্বের সেরা সুপারকম্পিউটার গুলো


সুপারকম্পিউটার এমন একটা যন্ত্র যাকে তুলনা করা যায় সুপারম্যানের সাথে। সুপারম্যান যেমন সাধারন মানুষের চেয়ে অনেকগুণ বেশি বুদ্ধিমান এবং শক্তিশালি তেমনি সুপারকম্পিউটারও সাধারন কম্পিউটারের চেয়ে হাজারগুণ বেশি ক্ষমতাসম্পন্ন। সাধারনত আবহাওয়া সঙ্ক্রান্ত তথ্য বিশ্লেষণ, ক্ষেপনাস্র ও স্যাটেলাইট নিয়ন্ত্রণ,মহাকাশ গবেষণা,পারমানবিক গবেষণা ও বিভিন্ন ধরনের জটিল বৈজ্ঞানিক কাজে সুপারকম্পিউটার ব্যবহৃত হয়। আসুন এবার দেখে নেয়া যাক পৃথিবীর সেরা সুপারকম্পিউটার গুলোকে।





IBM Sequoia

আইবিএম সেকুইয়া বর্তমান সময়ের সর্বাধিক দ্রুতগতির সুপারকম্পিউটার। এটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কম্পিউটার নির্মাতা প্রতিষ্ঠান আইবিএম(IBM) এর তৈরি। ২০১২ সালের জুন মাসে যুক্তরাষ্ট্রের লরেন্স লিভারমোর ন্যাশনাল ল্যাবরেটরিতে এটি স্থাপন করা হয়। এটি মূলত পারমানবিক অস্র সঙ্ক্রান্ত গবেষণা,মহাকাশ গবেষণা, আবহাওয়া সঙ্ক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য বিশ্লেষণ ইত্যাদি কাজে ব্যবহার করা হবে। লিনাক্স অপারেটিং সিস্টেমে পরিচালিত এই কম্পিউটারটি জাপানের ফুজিৎসু কে কম্পিউটারের তুলনায় ৫৫% বেশি শক্তিশালি। ১৬.৩২ পেটাফ্লপ্স গতিসম্পন্ন  সেকুইয়া ফুজিৎসু কে কম্পিউটারের তুলনায় ৩৭% বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী। এটি চালাতে মাত্র ৭.৯ মেগাওয়াট বিদ্যুতের প্রয়োজন হবে। ১৫,৭২,৮৪২ টি প্রসেসর সংবলিত সেকুইয়া কম্পিউটারটি ১.৬ পেটাবাইট মেমোরি ধারণক্ষমতা সম্পন্ন।



Fujitsu K Computer

কে কম্পিউটার জাপানের ফুজিৎসু কোম্পানির তৈরি একটি সুপারকম্পিউটার। বিশ্বের সেরা কম্পিউটারের তালিকায় বর্তমানে এটি ২য় অবস্থানে আছে। যুক্তরাষ্ট্রের সেকুইয়া কম্পিউটারের পরেই এটি বিশ্বের সর্বাধিক দ্রুতগতির সুপারকম্পিউটার। মূলত কে (K) শব্দটি এসেছে জাপানি শব্দ Kei থেকে যার অর্থ  ১০ কোয়াড্রিলিয়ন বা ১০ পেটাফ্লপজাপানের কোবে শহরের  রিকেন অ্যাডভান্সড ইনস্টিটিউট ফর কম্পিউটেশনাল সায়েন্স ক্যাম্পাসে এই কম্পিউটারটি স্থাপন করা হয়েছে। SPARC64 VIIIfx প্রসেসর সংবলিত সর্বোচ্চ ১০.৫১ পেটাফ্লপ গতিসম্পন্ন এই কম্পিউটারটিও লিনাক্স অপারেটিং সিস্টেমে পরিচালিত হয়। আবহাওয়া ও জলবায়ু সঙ্ক্রান্ত গবেষণা, পারমানবিক গবেষণা, ভুমিকম্প, জ্বালানি শক্তির উন্নয়ন ও বহুবিধ জটিল বৈজ্ঞানিক গবেষণার কাজে এই কম্পিউটারটি ব্যবহার করা হবে।



IBM MIRA


পৃথিবীর সবচেয়ে দ্রুতগতির ৫০০ সুপার কম্পিউটারের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের আইবিএম মিরা ৩য় অবস্থানে আছে। এটিও সেকুইয়া কম্পিউটারের মত Blue Gene/Q গোত্রের প্রসেসর ও ডিজাইনে তৈরি। যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অফ এনার্জির অধিনস্ত Argonne National Laboratory তে এটি স্থাপন করা হয়েছে। লিনাক্স অপারেটিং সিস্টেমে পরিচালিত এই কম্পিউটারটির প্রতি সেকেন্ডে ৮.১৬ পেটাফ্লপ গতিতে কাজ করে। এটি ভুমিকম্পের পূর্বাভাস প্রদান, পদার্থবিদ্যা, আবহাওয়া, রাসায়নিক গবেষণা ও বিভিন্ন বহুমুখী জটিল গবেষণার কাজে ব্যবহার করা হবে। এটি ৩.৯ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ শক্তিতে চলে। আইবিএম মিরা কম্পিউটারের নির্মাতা আইবিএম (IBM)  থেকে বলা হয়েছিল, যদি যুক্তরাষ্ট্রর প্রতিটি মানুষ এক বছরে প্রতি সেকেন্ডে যদি একটি করে গননা করে, তবে সেই পরিমান গননা করতে মিরা'র লাগবে মাত্র এক সেকেন্ড।



SuperMUC 
                                       
সুপার এমইউসি আইবিএম এর তৈরি একটি সুপারকম্পিউটার যা জার্মানির মিউনিখের কাছে অবস্থিত লিবনিজ সুপারকম্পিউটিং সেন্টারে স্থাপন করা হবে। এটি  সেকেন্ডে প্রায় ৩ পেটাফ্লপ গতিসম্পন্ন একটি সুপারকম্পিউটার যা লিনাক্স অপারেটিং সিস্টেমে চলে। এটি ১৮,৪৩২ টি ইন্টেল জিওনSandy Bridge-EP প্রসেসর,২৮৮ টেরাবাইট র‍্যাম এবং ১২ পেটাবাইট হার্ডডিস্ক ব্যবহার করা হয়েছে। আইবিএম এর উদ্ভাবিত Aquasar কুলিং সিস্টেম এই কম্পিউটারটিতে স্থাপন করা হয়েছে। এই কম্পিউটারটি লিবনিজ সেন্টারে স্থাপন করা হলে সেটি ইউরোপের গবেষকদের প্রধান গবেষণাকেন্দ্রে পরিনত হবে। জার্মানির bavarian academy of science এই কম্পিউটারটি পরিচালনা করবে। মূলত মেডিসিন, জ্যোতিঃপদার্থবিজ্ঞান, জীববিজ্ঞান, জেনম এনালাইসিস, ভুমিকম্প ইত্যাদি বিষয়সহ আরও অনেক জটিল বৈজ্ঞানিক গবেষণায় এই কম্পিউটারটি ব্যবহার করা হবে। এটি বিশ্বের সেরা ৫০০ কম্পিউটারের তালিকায় বর্তমানে ৪র্থ অবস্থানে আছে।



Tianhe-I & Tianhe-IA series 

Tianhe-1 শব্দটির ইংরেজি প্রতিশব্দ "Milky Way No.1"। গণচীনের ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব ডিফেন্স টেকনোলজি এই কম্পিউটারটি নির্মাণ করে। পূর্বের বিশ্বরেকর্ডধারী এই কম্পিউটারটি স্থাপন করা হয়েছে চীনের  তিয়ানজিন শহরের ন্যাশনাল সুপারকম্পিউটিং সেন্টারে। 2.566 পেটাফ্লপ গতিসম্পন্ন  এই কম্পিউটারটি Intel Xeon E5540 প্রসেসরে পরিচালিও। তিয়ানহে-১এ, তিয়ানহে-১ এর একটি আপগ্রেড ভার্সন। এটি ২০১০ সালের অক্টোবরে প্রথম প্রদর্শন করা হয়। এর সর্বোচ্চ গতি রেকর্ড করা হয় ৪.৭০১ পেটাফ্লপ। এর হার্ডডিস্ক মেমোরি ২ পেটাবাইট এবং র‍্যাম ২৬২ টেরাবাইট। ইন্টেল Xeon প্রসেসর এবং চাইনিজ FeiTeng প্রসেসর সংবলিত এই কম্পিউটারটিও তিয়ানহে-১ এর মত লিনাক্স অপারেটিং সিস্টেমে পরিচালিত। তিয়ানহে-১এ জুলাই,২০১১ পর্যন্ত এক নম্বর অবস্থানে ছিল। পরবর্তীতে জাপানের কে কম্পিউটার এই অবস্থান দখল করে। তিয়ানহে-১এ বর্তমানে সেরা ৫০০ সুপারকম্পিউটারের তালিকায় ৫ম অবস্থানে আছে। 




JAGUAR

সেরা ৫০০ সুপারকম্পিউটারের মধ্যে ৬ষ্ঠ অবস্থানে থাকা কম্পিউটারটির নাম হল জাগুয়ার। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্রে ইনকর্পোরেশনের তৈরি এই কম্পিউটারটি ওক রিজ ন্যাশনাল ল্যাবরেটরিতে স্থাপন করা হয়েছে। 224,256 x86-based AMD প্রসেসরে পরিচালিত এই কম্পিউটারটি  Cray Linux Environment অপারেটিং সিস্টেমে পরিচালিত যা ক্রে ইনকর্পোরেশন উদ্ভাবিত লিনাক্স অপারেটিং সিস্টেমের একটি ভার্সন। এর সর্বোচ্চ গতি ১.৭৫ পেটাফ্লপ। র‍্যামের পরিমান ৮ গিগাবাইট এবং হার্ডডিস্ক ৩৬০ টেরাবাইট। জাগুয়ার কম্পিউটার বর্তমানে বিভিন্ন জটিল ধরনের গবেষণা ও পরিমাপ কাজে ব্যবহৃত হয়। মূলত আবহাওয়ার প্রকৃতি অনুসন্ধান,খনিজ অনুসন্ধান, ভূতত্ত্ববিদ্যা, ভূকম্পনবিদ্যা, রাসায়নিক বিশ্লেষণ ইত্যাদি জটিল ও চ্যালেঞ্জিং গবেষণাক্ষেত্রে এই কম্পিউটার ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। নভেম্বর ২০০৯ থেকে ২০১০ সালের জুন পর্যন্ত এটি ছিল পৃথিবীর সবচেয়ে দ্রুতগতির কম্পিউটার। পরবর্তীতে তিয়ানহে ১এ কম্পিউটার এর শীর্ষস্থানটি দখল করে। 




FERMI

বিশ্বের সেরা ৫০০ সুপারকম্পিউটারের মধ্যে ৭ম অবস্থানকারী কম্পিউটারটির নাম ফেরমি। এটি ইটালির সিনেকাতে অবস্থিত যা ৫৪টি বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সমন্নয়ে গড়ে ওঠা একটি  অলাভজনক প্রতিষ্ঠান। এর সর্বোচ্চ ক্ষমতা ২.১ পেটাফ্লপ/ সেকেন্ড। র‍্যামের পরিমান ১৬ গিগাবাইট। এটি আইবিএম Blue Gene/Q গোত্রের প্রসেসর ডিজাইনে নির্মিত একটি কম্পিউটার যা ২০১২ সালের আগস্ট মাসে সম্পূর্ণভাবে এর কার্যক্রম শুরু করবে বলে আশা করা হচ্ছে। সম্পূর্ণভাবে চালু হলে এটি হবে ইটালি তথা ইউরোপের সর্বোচ্চ গতিসম্পন্ন কম্পিউটারগুলোর একটি। বিভিন্ন জটিল ধরনের মৌলিক গবেষণা, প্রকৌশলবিদ্যা, পদার্থবিদ্যা,গাণিতিক বিশ্লেষণ ইত্যাদি কাজে এই কম্পিউটার ব্যবহার করা হবে।








Saturday, July 21, 2012

যুদ্ধবিমানের ইতিহাসে সেরা বিমানগুলো

প্রতিটি প্রতিটি দেশের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিতকল্পে বিমান বাহিনীর গুরুত্ত অপরিসীম। শত্রু দেশের বিমান  আক্রমন মোকাবেলা এবং  প্রতি আক্রমনের মাধ্যমে দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষাকল্পে প্রতিটি দেশের নিজস্ব বিমান বাহিনী থাকা আবশ্যক।আজকের পোস্ট এ যুদ্ধবিমানের ইতিহাসে কয়েকটি আইকন বিমান নিয়ে আলোচনা করব।



MIG-21


মিগ ২১ সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের তৈরি ষাটের দশকের একটি যুগপৎ যুদ্ধবিমান। এটি পৃথিবীর সর্বাধিক উৎপাদিত এবং বিক্রিত বিমান গুলোর একটি। মিকোয়ান গুরেভিচ কোম্পানির নকশাকৃত এই বিমান এখনও পর্যন্ত পৃথিবীর বহু দেশ ব্যবহার করে। এর ন্যাটো কোডনেম ছিল Fishbed। মিগ২১ একটি সুপারসনিক জেট ফাইটার। এটি আকাশ থেকে মাটিতে এবং আকাশ থেকে আকাশে শত্রু বিমানের সাথে যুদ্ধ করতে বিশেষ পারদর্শী। সুপারসনিক গতি এবং উন্নত ম্যানুভ্যারিটি ক্ষমতা সম্পন্ন এই বিমান শত্রুর উপর নিমেষে আঘাত হেনে উড়ে জেতে পারে। ভিয়েতনাম যুদ্ধে উত্তর ভিয়েতনাম এই বিমান ব্যবহার করে আমেরিকানদের বাঘা বাঘা বিমানকে ভুপাতিত করেছিল। কারগিল যুদ্ধে ভারতীয় পাইলটরা মিগ২১ বিমান দিয়ে পাকিস্তানি এফ-১৬ বিমানকে তাড়া করেছিল। একজন দক্ষ পাইলটের পরিচালনায় এই বিমান এক ভয়ঙ্কর বিধ্বংসী মারনাস্র। বাংলাদেশ বিমান বাহিনীও অতীতে এই বিমান ব্যবহার করেছে। বর্তমানে আমাদের বিমান বাহিনী মিগ ২১ এর চাইনিজ ভার্সন এফ-৭ এয়ারগার্ড বিমান ব্যবহার করে।




MIG-29


মিগ২৯ বর্তমান সময়ের অন্যতম ভয়ঙ্কর একটি যুদ্ধবিমান । এটি সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের তৈরি ৪র্থ প্রজন্মের যুদ্ধবিমান যা ১৯৮৩ সালে প্রথম সোভিয়েত বিমানবহরে অন্তর্ভুক্ত হয়।এর ন্যাটো কোডনেম হল ফুল্ক্রাম। মিগ২৯ একটি মাল্টিরোল কমব্যাট ফাইটার যা একইসাথে আকাশে ও ভূমিতে হামলার জন্য অত্যন্ত পারদর্শী। এর শক্তিশালী Klimov RD-33 আফটার বার্নিং টার্বো ফ্যান ইঞ্জিন নিমেষেই বিমানকে সাবসনিক থেকে সুপারসনিক গতিতে নিয়ে যেতে পারে। অত্যাধুনিক কোবরা ম্যানুভ্যারিটি ক্ষমতাসম্পন্ন এই বিমান শত্রুবিমানের মিসাইলকে ফাঁকি দিয়ে পুনরায় পাল্টা আক্রমন চালাতে পারে। সোভিয়েতরা এই বিমানকে তাদের  স্টেট ওফ আর্ট হিসেবে পরিচয় দেয়। এটি দীর্ঘদিন পশ্চিমা এবং ইউরোপিয়ান দেশ গুলোর  ফিয়ার ফ্যাক্টর ছিল। মিগ২৯ বর্তমান সময়ের বহুল আলোচিত একটি বিমান যা পৃথিবীর বিভিন্ন বিমানবাহিনীতে অত্যন্ত সফলতার সাথে পরিচালিত হয়ে আসছে। বাংলাদেশ বিমানবাহিনীতে বর্তমানে ৮টি মিগ২৯ বিমান আছে। 



F-16



এফ ১৬ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি ৪র্থ প্রজন্মের মাল্টিরোল ফাইটার। মার্কিন প্রতিষ্ঠান জেনারেল ডাইনামিকস এই বিমানের নকশা করে। বর্তমানে লকহিড মারটিন কোম্পানি এই বিমান উৎপাদন করছে। মিগ-২৯ বিমানের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে মূলত এই বিমান নির্মাণ করা হয়। অফিসিয়ালি এই বিমানকে ফাইটিং ফ্যালকন বলা হলেও এর ভয়ঙ্কর ধ্বংস ক্ষমতার জন্য পাইলটরা একে ভাইপার বলে থাকে। ১৯৭৮ সালে সার্ভিসে আসার পর থেকে এই বিমান পৃথিবীর বহু দেশে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এর পরিচালন খরচ অন্যান্য বিমান থেকে কম হওয়ায় পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের বিমান বাহিনীর কাছে এর গ্রহণযোগ্যতা অনেক বেশি। বর্তমানে তুরস্কসহ আরও কয়েকটি দেশে এই বিমানের লাইসেন্সড ভার্সন তৈরি করা হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র,পাকিস্তান,তুরস্ক,ইসরায়েল,গ্রীস,ভেনেজুয়েলা,আরব আমিরাত সহ পৃথিবীর আরও অনেক দেশের বিমানবাহিনী এই বিমান ব্যবহার করে।


F-15 Eagle


এফ ১৫ ঈগল আমেরিকার বিমান নির্মাতা প্রতিষ্ঠান McDonnell Douglas এবং Boeing নির্মিত একটি অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমান। এটি মূলত একটি এয়ার সুপেরিয়রিটি ফাইটার। ভিয়েতনাম যুদ্ধের পর আমেরিকা F-X program হাতে নেয়। যার উদ্দেশ্য ছিল সোভিয়েত মিগ সিরিজের বিমানগুলোকে আকাশযুদ্ধে পরাজিত করার জন্য দক্ষ এবং ক্ষিপ্র বিমান নির্মাণ করা। এরই ফলশ্রুতিতে হেভিওয়েট ফাইটার হিসেবে জন্মলাভ করে এফ১৫ ঈগল এবং লাইটওয়েট ফাইটার হিসেবে এফ-১৬ ফ্যালকন। পাশাপাশি ইউএস নেভির জন্য তৈরি করা হয় এফ-১৪ টমক্যাট। এফ-১৫ দুই ইঞ্জিন বিশিষ্ট সুপার সনিক বিমান যার সর্বোচ্চ গতি প্রতি ঘণ্টায় ২৬৬৫ কিলোমিটার। উপসাগরীয় যুদ্ধে আমেরিকা অত্যন্ত সফলভাবে এই বিমান ব্যবহার করে। বর্তমানে আমেরিকা ছাড়াও ইসরায়েল,জাপান ও সৌদি আরবের বিমানবাহিনীতে এই বিমান ব্যবহৃত হয়।


Eurofighter Typhoon

ইউরোফাইটার টাইফুন একটি অত্যাধুনিক ডেল্টাউইং মাল্টিরোল ফাইটার। এটি মূলত ইংল্যান্ড, জার্মানি, ইটালি ও স্পেনের চারটি বিমান নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের একটি যৌথ প্রকল্প। ১৯৮৩ সালে ফ্রান্স, জার্মানি, ইটালি ও স্পেনের অংশগ্রহনে Future European Fighter Aircraft (FEFA) programme গ্রহন করা হয়। কিন্তু পরে ফ্রান্স এই প্রকল্প থেকে বেরিয়ে আসে এবং পরবর্তীতে তারা Rafale নামে একটি নতুন ফাইটার তৈরি করে। ফ্রান্স এই প্রকল্প থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর বাকি দেশগুলো তাদের এই প্রকল্প অব্যাহত রাখে। ফলশ্রুতিতে ২০০৩ সালে প্রথম সার্ভিসে আসে ইউরোফাইটার টাইফুন। এটি দুই ইঞ্জিন বিশিষ্ট একটি অসম্ভব দ্রুতগতির সুপারসনিক সেমি- স্টিলথ ফাইটার।টাইফুনকে এফ-২২ র‍্যাপটর এর অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে দাবি করে এর নির্মাতা প্রতিষ্ঠান।বর্তমানে ইংল্যান্ড, জার্মানি, ইটালি, স্পেন ছাড়াও সৌদি আরব,অস্ট্রিয়া প্রভৃতি দেশের বিমান বাহিনীতে এই বিমান ব্যবহৃত হচ্ছে। 



Saab JAS 39 Gripen


গ্রিপেন সুইডেনের তৈরি ডেল্টা উইং লাইটওয়েট মাল্টিরোল ফাইটার। ১৯৭৯ সালে সুইডেন সরকার একটি শক্তিশালী ও কার্যকরী বিমান নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহন করে যা একইসাথে আকাশ যুদ্ধ, ভূমিতে বোমাবর্ষণ ও গোয়েন্দাগিরি করার জন্য বিশেষভাবে পারদর্শী।এটি প্রথম সার্ভিসে আসে ১৯৯৭ সালের পহেলা নভেম্বর।সুইডিশ এরোস্পেস কোম্পানি (SAAB) নির্মিত সুপারসনিক এই বিমানটির সর্বোচ্চ গতি ম্যাক ২ (২২০৪ কিঃমিঃ/ ঘণ্টা)/ইউরোপিয়ান এবং ন্যাটো স্ট্যান্ডার্ডে তৈরি এই বিমানের পরিচালন ব্যয় তুলনামুলকভাবে কম।বর্তমানে সুইডেন ছাড়াও দক্ষিন আফ্রিকা, থাইল্যান্ড,  ইংল্যান্ড, হাঙ্গেরি, চেক প্রজাতন্ত্রের বিমান বাহিনীতে এই বিমান ব্যবহৃত হচ্ছে।




Sukhoi Su-27


সুখোই এসইউ-২৭ সোভিয়েত রাশিয়া নির্মিত একটি সুপারসনিক যুদ্ধবিমান। এর ন্যাটো রিপোরটিং নাম হল Flanker । ১৯৬৯ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন আমেরিকার "F-X" program সম্পর্কে জানতে পারে। এর পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে তারা TPFI program গ্রহন করে যার উদ্দেশ্য ছিল আমেরিকার এফ-১৫ এবং এফ-১৬ বিমানগুলোকে আকাশযুদ্ধে প্রতিহত করার জন্য দ্রুতগামী ও শক্তিশালী বিমান নির্মাণ করা। ফলশ্রুতিতে সার্ভিসে আসে মিগ-২৯ এবং এসইউ-২৭ বিমানগুলো। এসইউ-২৭ একটি সুপার ম্যানুভারেবল ডেল্টাউইং বিমান যা অত্যাধুনিক রাডার,সেন্সর এবং ক্ষেপণাস্ত্র সজ্জিত। দুটি শক্তিশালী Saturn/Lyulka AL-31F turbofans ইঞ্জিনবিশিষ্ট এই বিমানের সর্বোচ্চ গতি ম্যাক ২.৩৫ বা ২৫০০ কিমি./ঘণ্টা। ১৯৮৪ সালে সার্ভিসে আসার পর থেকে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের বিমানবাহিনী এই বিমান ব্যবহার করে। বর্তমানে রাশিয়া,গণচীন, এঙ্গোলা, বেলারুশ,ইথিওপিয়া, ভিয়েতনাম, উজবেকিস্তান, কাজাখস্তান, ইউক্রেনসহ পৃথিবীর বহু দেশের বিমানবাহিনী এই বিমান ব্যবহার করছে।





Dassault Rafale


রাফালে ফ্রান্সের Dassault Aviation নির্মিত একটি ডেল্টাউইং মাল্টিরোল ফাইটার। ১৯৭০ সালে ফ্রান্স সরকার তাদের বিমানবাহিনী ও নৌবাহিনীকে ঢেলে সাজানোর পরিকল্পনা গ্রহন করে। তারা ইংল্যান্ড, জার্মানি, ইটালি ও স্পেনের সাথে ১৯৮৩ সালে ইউরোফাইটার প্রকল্পে যোগ দেয়। কিন্তু এই প্রকল্প আশানুরূপ না হওয়ায় পরবর্তীতে ফ্রান্স প্রকল্প থেকে বেরিয়ে আসে এবং নিজস্ব প্রযুক্তি ও ডিজাইনে একটি কার্যকর মাল্টিরোল ফাইটার নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহন করে। ফলশ্রুতিতে ২০০০ সালের ৪ ডিসেম্বর সার্ভিসে আসে রাফালে বিমানটি। রাফালে বিমানটিতে সর্বাধুনিক প্রযুক্তির রাডার,সেন্সর সিস্টেম, কম্পিউটার সংযোজিত হয়েছে । দুটি Snecma M88 ইঞ্জিনসংবলিত এই বিমানটি অত্যন্ত দ্রুতগামী। এর সর্বোচ্চ গতিবেগ ম্যাক ১.৮ বা ২১৩০ কিমি./ ঘণ্টা। এটি দিবারাত্রি যুদ্ধের উপযোগী একটি অত্যন্ত কার্যকর বিমান। ফ্রান্সের নৌ ও বিমান বাহিনীতে বর্তমানে এই বিমান ব্যবহৃত হয়। এছাড়াও ভারতীয় বিমান বহরে এই বিমান যুক্ত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।



Chengdu J-10



চেংডু জে-১০ গণচীনের তৈরি একটি মাল্টিরোল যুদ্ধবিমান। চীনের Chengdu Aircraft Industry Group (CAC) নির্মিত এই বিমানটি সকল আবহাওয়ায় ব্যবহার উপযোগী একটি সুপারসনিক বিমান। পশ্চিমা বিশ্বে এই বিমানটি Vigorous Dragon নামে পরিচিত। বর্তমানে রাশিয়ান Saturn AL-31 ইঞ্জিনে পরিচালিত এই ফাইটারের পরবর্তীতে ভার্সন গুলোতে চীনের নিজস্ব WS-10A (WoShan-10A) Taihang ইঞ্জিন ব্যবহার করা হবে। চীনা বিমানবাহিনীর অন্যতম একটি স্তম্ভ হিসেবে এই বিমানটি পরিচিত। এর সর্বোচ্চ গতি ম্যাক ২.২ যার ফলে এটি নিমেষেই সুপারসনিক স্পিডে শত্রুবিমানকে ধাওয়া করতে পারে। চীনের নিজস্ব প্রযুক্তির রাডার, সেন্সর, ককপিট ও অন্যান্য যন্ত্রাংশ সংযোজিত এই বিমানটি অত্যন্ত আধুনিক ও যুগোপযোগী। বর্তমানে চীনের বিমানবাহিনীতে ২৬০টির বেশি জে-১০ বিমান আছে। শীঘ্রই পাকিস্তান বিমানবাহিনীতেও (২০১৪-১৫) এই বিমান সংযোজিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।






Dassault Mirage 2000


মিরেজ ২০০০ ফ্রান্সের ডাসাল্ট এভিয়েশন নির্মিত একটি ৪র্থ প্রজন্মের মাল্টিরোল ফাইটার। এটি একটি হালকা ধরনের বিমান যা ৭০ এর দশকের বিমান মিরেজ III এর উন্নত সংস্করন হিসেবে সার্ভিসে আসে । ডাসাল্ট এভিয়েশন প্রস্তাবিত মিরেজ২০০০ প্রজেক্টটিকে ফ্রান্স সরকার ১৮ ডিসেম্বর ১৯৭৫ সালে অনুমোদন করে এবং ১৯৮২ সালে মিরেজ ২০০০ প্রথম সার্ভিসে আসে। মিরেজ২০০০ এর অনেকগুলো  আপগ্রেড ভার্সন নির্মিত হয়েছে যেমনঃ মিরেজ২০০০N এবং মিরেজ২০০০D, মিরেজ২০০০-৫ ইত্যাদি। একটি SNECMA-M53 Turbofan ইঞ্জিন সংবলিত এই বিমানটির সর্বোচ্চ গতি ম্যাক ২.২  অর্থাৎ প্রতি ঘণ্টায় ২৫৩০ কিমি.।এটি অত্যাধুনিক প্রযুক্তির রাডার,এভিয়নিক, ককপিট ও ক্ষেপনাস্র সজ্জিত একটি বিমান যা একইসাথে এয়ার টু এয়ার কমব্যাট এবং ভূমিতে বোমাবর্ষণের জন্য অত্যন্ত পারদর্শী। বর্তমানে ফ্রান্সের বিমান বাহিনী ছাড়াও ভারত, সংযুক্ত আরব আমিরাত, তাইওয়ান, গ্রীস, মিশর, কাতার, পেরু, ব্রাজিল ইত্যাদি দেশের বিমান বাহিনী মিরেজ২০০০ বিমানটি সাফল্যের সাথে  ব্যবহার করে আসছে।





source:  উইকিপিডিয়া
                     ড্যাসাল্ট এভিয়েশন, ফ্রান্স


(এই পোস্টটি 10 February, 2013 on 7:13 pm  তারিখে www.techtunes.com.bd ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়েছে)